ছবি সংগৃহীত
শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনকে সরকার নজিরবিহীন নৃশংসতার মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সংগঠনের নেতারা বলেন, তাদের আন্দোলন দমনে যুদ্ধের সময়েও যেসব নিয়মনীতি মানা হয়, সেটাও মানছে না সরকার। জনসমর্থনহীন সরকার অস্ত্রের জোরে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থী ও জনতা হত্যার দায়ে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন। ‘শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার বিচার, হামলা-মামলা-হয়রানি বন্ধ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তাতে বলা হয়, গত ১৬ থেকে ২০ জুলাইয়ে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। শিক্ষার্থী-জনতার ওপর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে এখন ইন্ধন ও নাশকতার অজুহাতে সরকার শিক্ষার্থী ও বিরোধী দলকে দমনের অভিযান চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের আর কোনো আন্দোলনে এত নিরীহ মানুষ এভাবে প্রাণ হারায়নি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই আন্দোলন কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন হিসেবে তৈরি হলেও জনগণের বিপুল অংশগ্রহণে তা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের পেছনে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের যেমন সহানুভূতি ছিল, তেমনি ছিল নিজেদের জীবনে বহু বছরের দুঃশাসনের বঞ্চনা।
এতে আরও বলা হয়, চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সীমাহীন লুটপাট-পাচার, গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে না পারা, সরকারের কাছের লোকদের লাগামহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আর সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য দিয়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা এসব মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের জমিন তৈরি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না নিয়ে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতার যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, এর সমুদয় দায়দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। জনগণের জানমালের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সরকার হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন-নিপীড়ন ও মিথ্যা প্রচারের যে পথে হাঁটছে সে পথে এ সংকটের সমাধান নেই। সংকট উত্তরণে সরকারকে রাজনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে।
সরকার ও সরকারি দল কার্যত জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দাবি করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকার কেবল বল প্রয়োগের মাধ্যমে এই গণআন্দোলন দমন করতে চেয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী জাগ্রত জনতার সামনে রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ চিরকালই পরাজিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে আগামী ৩১ জুলাই রাজধানীর পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের ট্যাগ দিয়ে তাদের চরিত্রহনন করছে। সরকার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে যুদ্ধের নিয়মও মানেনি। আবাসিক এলাকায় ঢুকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। যা যুদ্ধের সময় করা হয় না। জনসমর্থন হারিয়ে এ সরকার অস্ত্রের মুখে টিকে থাকতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব আবু ইউসুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি অনুপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম গত ১৯ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে পুলিশের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। আর সেদিন পুলিশের হামলায় আহত জোনায়েদ সাকির ওপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক দফা হামলা করে সরকার দলীয় লোকজন। সূএ: ঢাকা পোস্ট ডটকম